•ক্রেডিট কার্ড এর পরিচয় কি?
ব্যাংক থেকে নেয়া কার্ডগুলোর সাথে সকলেই কম বেশি পরিচিত যাকে ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ড বলা হয়ে থাকে।এই কার্ডগুলো ব্যবহার বর্তমানে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে যা একটি ক্যাশলেস অর্থনীতি তৈরির পথে বিশ্বকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।এক তথ্যসূত্র অনুযায়ী ২০১৯ সালে ক্রেডিট কার্ড , ডেবিট কার্ড এবং প্রিপেইড কার্ডের সংখ্যা ছিল ২০.৮ বিলিয়ন।২০২৩ সালে গিয়ে ২৯.৩১ বিলিয়ন গিয়ে দাঁড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।২০২১ সালের আগস্ট মাসের তথ্য অনুযায়ী মোট কার্ডের মধ্যে শুধুমাত্র ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা ২.৮ বিলিয়ন।এছাড়া প্রতিদিন সারা বিশ্বে ১.০১ বিলিয়নের বেশি ক্রেডিট কার্ড লেনদেন হয়ে থাকে। ইউএসএ তে ১.০৬ বিলিয়ন ক্রেডিট কার্ড সচল আছে এবং মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ মানুষ অন্তত একটি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে থাকে।যেখানে বাংলাদেশে ক্রেডিট কার্ড রয়েছে ১.৮ মিলিয়নের কাছাকাছি কিন্তু মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশ মানুষের কম মানুষই এই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে।বিনামূল্য কিভাবে ক্রেডিট কার্ড পাওয়া যায়
•ক্রেডিট কার্ড কি?
ব্যাংক কার্ডগুলো সাধারনত প্লাস্টিকের তৈরি কার্ড যা নির্দিষ্ট ব্যাংকসমূহ একজন ব্যক্তিকে দিয়ে থাকে।এছাড়া কিছু কোম্পানি তাদের সদস্যদের আর্থিক লেনদেনের বিভিন্ন সুবিধা দেয়ার জন্য কার্ড দিয়ে থাকে।ব্যাংক কার্ডে সাধারনত যে সদস্য হয়েছে তার নাম,ইস্যুকারীর নাম,ওই সদস্যের কার্ড নম্বরসহ আরো কিছু জরুরী তথ্য থাকে।এর ওপর পাশে এক ধরনের ম্যাগনেটিক স্ট্রেপ বা ইলেকট্রনিক চিপ থাকে যা থেকে মেশিনগুলো ডাটা অ্যাকসেস করে।আমাদের মধ্যে অনেকরই ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডের পার্থক্য নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি আছে।একটি ডেবিট কার্ড মূলত একজন সদস্যের ব্যাংক একাউন্টের সাথে সরাসরি যুক্ত থাকে।এর ফলে সে তার ব্যাংক একাউন্ট থেকে ডিপোজিট করা ফান্ড থেকে কোনো কিছু কিনে পেমেন্ট করতে পারে এবং এ টি এম থেকে ক্যাশ ক্যাশ বের করতে পারে।অপরদিকে একটি ক্রেডিট কার্ড একজন কার্ড হোল্ডারকে প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস ক্রয়ের ক্ষেত্রে তার একটি টাকার ক্রেডিট লিমিট পর্যন্ত সুবিধা দিয়ে থাকে।যখন কেউ ক্রেডিট কার্ড দিয়ে পেমেন্ট করে তখন সে তার নিজের একাউন্ট থেকে কোনো অর্থ পাবে না বরং সেই কার্ড ইস্যুকারী বা ব্যাংকের অর্থের একটি দ্রুত লোন নিয়ে থাকে যা পরবর্তীতে তাকে আবাব পরিশোধ করে দিতে হবে।ক্রেডিট কার্ড একটি নিরাপদ প্রক্রিয়া কারণ ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ই-কমার্স বা অন্য কোথাও পেমেন্ট করে ব্যবহারকারী প্রতারিত হলে সেই টাকা ফেরত পাওয়া যায়। যার ফলে একজন ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী অনলাইনে কেনাকাটা বা লেনদেনে একেবারে নিরাপদ থাকেন।ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে ব্যবহারকারী বড় কোনো খরচ কিস্তিতে বা
(ই এম আর আই) এর মাধ্যমে দিতে পারেন।এছাড়া ক্রেডিট কার্ডে ডুয়াল কারেন্সির সুবিধা রয়েছে যার ফলে একজন ব্যবহারকারী তার কার্ড ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্টের ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারবে।এছাড়া ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীরা শপিং ও পেমেন্টের জন্য এক্সট্রা ডিসকাউন্ট পায়।অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের জন্য প্রী-ইনস্টল করার সুযোগও আছে।যদি সে তার লোন পরিশোধ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে না করতে পারে তাহলে এই লোনের উপর ইন্ট্রেস্ট দেয়া হয়।ক্রেডিট কার্ডের এক তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালের অক্টোবর মাসের গ্লোবাল এভারেজ ক্রেডিট কার্ড রেঞ্জ ১৬.১৬ শতাংশ।অর্থাৎ একজন গ্রাহক যথাসময়ে তার লোন পরিশোধ করতে ব্যার্থ হলে পরবর্তীতে অতিরিক্ত ইন্টারেস্টসহ পরিশোধ করতে হয়।এরকম যতবার লোন পরিশোধ করতে ব্যার্থ হবে ততবারই চক্রবৃদ্ধি হারে ইন্টারেস্ট যোগ হতে থাকবে এবং সেটা পরিশোধ করতে হবে।তবে ক্রেডিট কার্ড ইস্যুকারী এবং ক্রেডিট কার্ড নেটওয়ার্ক প্রোভাইডারের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে।বেশিরভাগ ক্রেডিট কার্ডই ব্যাংক ইস্যু করে।তবে কিছু নন ব্যাংক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে।অন্যদিকে নেটওয়ার্ক প্রোভাইডাররা সাধারনত ব্যাংক বা কার্ড ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আলাদা হয়।তারা প্রধানত ক্রেডিট কার্ডের লেনদেনের জন্য অবকাঠামো নেটওয়ার্ক দিয়ে থাকে।ভিসা , মাস্টারকার্ড , ডিসকভার , এমেরিকান এক্সপ্রেস এই ৪ টি হলো প্রধান ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড নেটওয়ার্ক যা গ্লোবাল ক্রেডিট কার্ড নেটওয়ার্কের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ দখল করেছে।তাদের মধ্যে প্রায় ৫৩ শতাংশ মার্কেট প্রাইস নিয়ে বর্তমানের প্রথম নেটওয়ার্ক প্রোভাইডার।অন্যদিকে মাস্টারকার্ড ৩১.৬ শতাংশ নিয়ে দ্বিতীয় এবং ডিসকভার ৮.১ শতাংশ নিয়ে তৃতীয় আর এমেরিকান এক্সপ্রেস ৭.৫ শতাংশ নিয়ে চতুর্থ স্থানে রয়েছে।তবে ডিসকভার এবং এমেরিকান এক্সপ্রেস এই দুটি প্রতিষ্ঠান একই সাথে ক্রেডিট কার্ড ইস্যুকারী এবং ক্রেডিট কার্ড নেটওয়ার্ক প্রোভাইডার।
•ক্রেডিট কার্ড আবিষ্কার কিভাবে হয়েছে?
ক্রেডিট কার্ডের যাত্রা শুরু হয় ১৯২৮ সালে যখন মডার্ন ক্রেডিট কার্ডের পূর্বশরু থি চারগা প্লেট উন্নত করা হয়।এটি আয়তক্ষেত্রাকার ধাতব শীটযা তখনকার ব্যবসায়ীরা তাদের নিয়মিত গ্রাহকদের প্রদান করতেন।কার্ডগুলো ছিল বর্তমান সময়ের ডিপার্টমেন্ট স্টোরের কার্ডের মতোই।১৯৩৪ সালে এমেরিকান এয়ারলাইনস এবং এয়ার ট্রান্সপোর্ট এসোসিয়েশন কাস্টমারদের ক্রয় কিনো এখন বা পরে পরিশোধ করো এই সুবিধা অফার দিতে এয়ার ট্রাভেল কার্ড পরিচয় করে।১৯৫০ সালে ডাইনার্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল এর দুই প্রতিষ্ঠাতা রালফ নাইদার এবং ফ্রাঙ্ক মেকনামারা চার্জ কার্ড নামে প্রথমবারের মতো যেকোনো জায়গায় ব্যবহার করার জন্য একটি কার্ড তৈরি করেন।১০৫৮ সালে ব্যাংক অফ এমেরিকা প্রথমবারের মতো ব্যাংক এমেরিকার্ড নামে একটি মডার্ন ক্রেডিট কার্ড বের করে যা সব জায়গায় গ্রহণযোগ্য।১৯৬৬ সালে ব্যাংক এমেরিকার্ড এর সাথে প্রতিযোগিতা করার জন্য মাস্টারচার্জ নামে আরো একটি কার্ড বের করা হয় যা বর্তমানে মাস্টারকার্ড নামে পরিচিত।১৯৮৬ সালে ব্যাংক এমেরিকার্ডের নাম পরিবর্তন করে ভিসা রাখা হয়।আর আশি দশকে ক্রেডিট কার্ডে ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ যুক্ত করা হয় এবং নব্বই দশকে EMV চিপ টেকনোলজি যুক্ত করা হয় ক্রেডিট কার্ডে।এভাবে ক্রেডিট কার্ড ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে বর্তমানের পরিচিত ক্রেডিট কার্ড হয়ে উঠেছে।বর্তমানে USA পৃথিবীর সেরা ক্রেডিট কার্ড হোল্ডিং দেশ।এক তথ্যসূত্র অনুযায়ী USA এর ৭০ শতাংশ মানুষ অন্তত ১ টি , ৩৪ শতাংশ মানুষ অন্তত ৩ টি এবং ১৪ শতাংশ মানুষ অন্তত ১০ টি করে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে।USA এর অনেকেই বেতন পাওয়ার আগেই অনেক খরচ করে ফেলে।কিন্তু চায়না বা অন্য দেশের মানুষ প্রথমে আয় করে এবং তারপর সে অনুযায়ী খরচ করতে পছন্দ করে।চাইনিজ বিলিয়নিয়ার জাকমার মতে, আমেরিকানরা আগামীকালের অর্থ এবং অন্যান্য লোকেদের অর্থ ব্যয় করতে পছন্দ করে। যখন আমরা চীনারা অর্থ সঞ্চয় করতে পছন্দ করি।এটি এমেরিকার একটি জনপ্রিয় ক্রেডিট কার্ডের প্রথম কারণ বলে মনে করা হয়।কানাডায় সকল মানুষের মধ্যে ৭৮ শতাংশ মানুষের কাছে ক্রেডিট কার্ড রয়েছে।জাপান , নরওয়ে , ফিনল্যান্ড , অস্ট্রেলিয়া , নিউজিল্যান্ড সহ আরো কিছু দেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সংখ্যা বেশি।বাংলাদেশের ১.৬২ শতাংশ মানুষ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের ১ শতাংশ মানুষ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে যা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম।তবে বাংলাদেশে ক্রেডিট কার্ডের জনপ্রিয়তা এখন বেড়েই চলছে। বাংলাদেশে ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে সাড়ে সতেরো লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে।
•ক্রেডিট কার্ড কিভাবে কাজ করে?
ক্রেডিট কার্ড লিমিট বলতে বুঝায় ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে ব্যবহারকারী সর্বোচ্চ কতটুকু এমাউন্ট খরচ করতে পারবে। বাংলাদেশে এই লিমিট ঠিক রাখতে ব্যাংক ইউজারের মাসিক বা বাৎসরিক ইনকাম সম্পর্কিত তথ্য এর উপর নির্ভর করে।এছাড়া ইউজারের দেনা পাওনা বা লোন কতটুকু রয়েছে তা দেখার জন্য DBR মূল্যায়ন করা হয়।এর পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ইউজারের CIB রিপোর্টও সংগ্রহ করা হয়।এসব তথ্য মূল্যায়ন করে ইউজারকে একটি ক্রেডিট স্কোর প্রদান করে যার ভিত্তিতে ক্রেডিট লিমিট নির্ধারণ করা হয়।ঠিক সময় টাকা পরিশোধ করতে পারলে এর ক্রেডিট স্কোরও পরিবর্তিত হয়।
আজকে এই পর্যন্তই।এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা ক্রেডিট কার্ডের সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।আপনাদের পড়ার জন্য ধন্যবাদ।পরবর্তী পোস্ট এ বাংলাদেশের সেরা কিছু ব্যাংক এবং তাদের কাছ থেকে কিভাবে ক্রেডিট কিংবা ডেবিট কার্ড পাওয়া যায় সে বিষয়ে আলোচনা করবো।