‘ আসসালামুয়ালাকুম সবাইকে ‘
ওয়ালটনের পরিচয় কি?
ওয়ালটন বাংলাদেশের অন্যতম একটি ইলেকট্রনিক ব্র্যান্ড।আমাদের জীবনের প্রতিনিয়ত ব্যবহৃত জিনিস যেমন: টিভি, ফ্রিজ, এসি থেকে শুরু করে ফ্যান, লাইট, অটোমেটিক চুলা এবং কিচেনের সব গেজেট রয়েছে ওয়ালটনে।নিজেদের কারখানায় উৎপাদিত এসব পণ্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করছে প্রতিষ্ঠানটি।বাংলাদেশের মোট রেফ্রিজারেটর মার্কেটে প্রায় ৭৫ শতাংশের বেশি মার্কেট শেয়ার রয়েছে ওয়ালটনের দখলে।২০২০ সালে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ হওয়ার মাধ্যমে ওয়ালটন স্টক মার্কেটে যাত্রা শুরু করে।এর পরই প্রতিষ্ঠানটি স্টক মার্কেটের লিস্টে সব ইলেকট্রনিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে শীর্ষ মূলধনী বিশিষ্ট প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠে ওয়ালটন।
ওয়ালটন কোম্পানিটি কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে?
ওয়ালটন প্রতিষ্ঠানটির নির্মাতা মরহুম আলহাজ এস.এম নজরুল ইসলাম ১৯২৯ সালে টাঙ্গাইল জেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।ছোটবেলা থেকেই তিনি সৎ, ন্যায়পরায়ণ ছিলেন।তিনি ১৯৭৭ সালে পারিবারিক ব্যাবসা ছেড়ে দিয়ে নিজেই ব্যাবসা শুরু করেন।সেই বছরই জনাব নজরুল ইসলামের বড় দুই ছেলে তাদের পারিবারিক ব্যাবসায় যোগ দেন।তাদের ব্যাবসায়িক দূরদর্শিতায় ওয়ালটন গ্রুপের নতুন যুগের সূচনা ঘটে।১৯৯১ সালে তৃতীয় ছেলে এবং ১৯৯২ সালে চতুর্থ ছেলে ব্যাবসায় যোগ দিলে ঢাকায় ওয়ালটনের ব্রাঞ্চ সম্প্রসারণ করা হয়।১৯৯৬ সালে পঞ্চম ছেলে চট্টগ্রামে ওয়ালটনের আরো একটি শাখা স্থাপন করেন।পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সময়ে ব্যাবসা সম্প্রসারণের মাধ্যমে ১৯৯৭ সালে ওয়ালটন ইলেকট্রনিক বিজনেসে যুক্ত হয়।
কিভাবে ওয়ালটনের এই যাত্রা এগিয়ে গিয়েছিল?
২০০৭ সালে ওয়ালটন গাজীপুরে টিভি, ফ্রিজ, এসি এবং মোটর বাইকের জন্য নিজস্ব ফেক্টরি প্রতিষ্ঠা করে।ট্রেইল প্রোডাকশন শেষে পরবর্তী বছরে বাণিজ্যিক উৎপাদন ও বিক্রি কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে ওয়ালটন গ্রুপের অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিয়াল লিমিটেড।২০১০ সালে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দেন গোলাম মোসেদ।যিনি পরবর্তীতে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিয়াল লিমিটেদের ব্যাবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।২০১০ সালে মোবাইল ফোন লঞ্চ করার মাধ্যমে ডিজিটাল ডিভাইস মার্কেটে প্রবেশ করে ওয়ালটন।২০১১ সালের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি এয়ার কন্ডিশনার, টিভি এবং হমাপেঞ্চ উৎপাদন বিক্রয় ও এক্সপোর্ট করা শুরু করে।২০১২ সালে এস.এম মনজুরুল আলম, তাহমিনা আফরোজ তান্নাহ, রাইসা সিগমা হিমা ওয়ালটন গ্রুপে যোগ দেন।তাদের অবদানে বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য খাত প্রতিনিয়ত আরো সমৃদ্ধশালী
হচ্ছে।২০১২ সালে সেরা ব্র্যান্ড পুরস্কার, ২০১১ এর ব্র্যান্ড রাঙ্কিংয়ে দ্বিতীয় ও অবস্থানে ছিল ওয়ালটন টেলিভিশন।অন্যদিকে ২০১৩ সালে ওয়ালটন মাইক্রো টেক কর্পোরেশন নামে একটি টেলিভিশন ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান প্রতিষ্ঠা করা হয়।২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে কোম্পানিটির প্রফিটের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩১৪ কোটি টাকা।২০১৪ সালে কোম্পানিটি কিচেন অ্যাডভান্স ম্যানুফ্যাকচরিং প্ল্যান প্রতিষ্ঠা করে এবং ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে তাদের প্রফিটের পরিমাণ আরো বেড়ে দাঁড়ায় ৫০২ কোটি টাকা।২০১৫ সালে স্থানীয় রেফ্রিজারেটরে প্রায় ৮০ শতাংশ এবং টেলিভিশনে প্রায় ৩০ শতাংশ শেয়ার দখল করেছে কোম্পানিটি।সেই বছর থেকে ওয়ালটনের বাৎসরিক প্রোডাক্টের পরিমাণ হয়ে দাঁড়ায় ১৪ লক্ষ রেফ্রিজারেটর, ১০ লক্ষ টেলিভিশন, ৩ লক্ষ মোটর সাইকেল এবং ৩ লক্ষ এয়ার কন্ডিশনার।সেসময় কোম্পানিটির জনবলের সংখ্যা ছিল ১৪ হাজার জন যার মধ্যে ১,০০০ জন এমপ্লয়ি আর.এন.ডি.ডি ভিশনে কর্মরত ছিল।২০১৫ সালের অর্থবছরে কোম্পানিটির প্রফিট আগের বছরের তুলনায় বেড়ে দাঁড়ায় ৬২১ কোটি টাকা।২০১৬ সালে মাত্র ৭ টি চ্যানেল এবং ১ লক্ষ প্রোডাক্টশন ক্যাপাসিটি নিয়ে যাত্রা শুরু করে ওয়ালটন হোম প্লানস।২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির প্রফিটের পরিমাণ হয়ে দাঁড়ায় ৭২৬.৪৫ কোটি টাকা।২০১৭ সালে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড এবং টেস্টিং ইনস্টিটিউট কর্তৃক নির্ধারিত মানদণ্ড অনুসরণ করে গুণগত মনের বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ফ্রিজ তৈরি করায় সেই বছর ওয়ালটনের ফ্রিজ ফাইভ স্টার এনার্জি রেটিং পেতে সক্ষম হয়।সেই বছর এপ্রিলে চন্দ্রায় ওয়ালটন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে বাংলাদেশের একমাত্র কম্প্রেসিং উৎপাদন ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হয়।
একই মাসে জার্মানির একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ৪ লক্ষ ঢালাই অংশের অর্ডার পায় ওয়ালটন কম্প্রেসার ইউনিট।এর পাশাপাশি অক্টোবর মাসে গাজীপুরের চন্দ্রায় মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদন প্রতিষ্ঠা করে ওয়ালটন যেখানে বছরে ৩০ লক্ষ হ্যান্ডসেট তৈরি করার ক্যাপাসিটি রয়েছে।সেই বছর কোম্পানিটি লোকাল মার্কেটে মত ১২ লক্ষ ইউনিতের বেশি স্মার্টফোন এবং ৪১ লক্ষ ইউনিটের বেশি ফিচার ফোন বিক্রি করতে সক্ষম হয়।যদিও ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে কোম্পানিটির প্রফিটের পরিমাণ প্রায় অর্ধেক কমে দাঁড়ায় ৩৫২ কোটি টাকা।২০১৮ সালে ওয়ালটন দেশে আইসিটির সাথে জড়িত পণ্য উৎপাদন শুরু করে।
একই বছরেই নেশনাল এনভায়রনমেন্ট অ্যাওয়ার্ড এবং এইচ.এস.বি. সি থেকে রপ্তানিতে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করতে সক্ষম হয় কোম্পানিটি।সেই বছর ওয়ালটন বাংলাদেশের সর্বপ্রথম লোকাল ফোন উৎপাদনকারী কোম্পানি হওয়ার পাশাপাশি সেগুলো রপ্তানিও শুরু করে।ততদিনে ওয়াল্টনের স্মার্টফোন প্রোডাকশন ক্যাপাসিটি দাঁড়ায় বছরে ৮ লক্ষ এবং ফিচার ফোন প্রোডাকশন ক্যাপাসিটি দাঁড়ায় ২০ লক্ষ।শুরুর দিকে ওয়ালটনের ফোনগুলো কাস্টমারদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে কেননা কম দামে একটি ভালো এবং নতুন নতুন অনেক ফিচারসহ ফোন দিয়ে যাচ্ছিল তারা।অন্যদিকে ২০২০ সালে ওয়ালটন ২০ লক্ষ ফ্রিজ বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছিল। অন্যান্য প্রোডাক্টও তারা বেশি করে বিক্রি করতে সক্ষম হয় যার ফলে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে প্রফিটের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১,৯৭৬ কোটি টাকা।
বর্তমানে ওয়ালটনের কারখানায় বছরে ২৫ লক্ষ রেফ্রিজারেটর এবং ফ্রিজার তৈরি করা হচ্ছে।ওয়ালটনের এতসব অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ম্যানেজিং ডিরেক্টর সি.ও গোলাম মোরশেদ।তিনি ২০১০ সালে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দেয়ার পর তার মেধা ও যোগ্যতার মাধ্যমে রেফ্রিজারেটর বিভাগের সি.ও থেকে ব্যাবস্থাপনা
পরিচালকের দায়িত্বে উঠে আসতে সক্ষম হয়।ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিয়াল লিমিটেডকে শেয়ার মার্কেটে আনার অন্যতম অবদান তার।তার লিডারশিপে ওয়ালটন টেকনোলজি প্রোডাক্টগুলোকে আরো উন্নয়নের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছে।ওয়ালটনের যাত্রা শুরুর আগে সিঙ্গার,কনকা,
টিসিএল এর মত ব্র্যান্ডগুলো সাশ্রয়ী মূল্যে কাস্টমারদের ইলেকট্রনিক পণ্য অফার করে যাচ্ছিল।তবে ওয়ালটন তাদের মানসম্পন্ন পণ্য সবার কাছে বিক্রি করার মাধ্যমে তাড়াতাড়ি এই মার্কেটে শক্ত অবস্থান তৈরি করে নেয়।এই কোম্পানি ছাড়াও মার্কেটে আরো অন্যান্য কোম্পানি আসলেও ওয়ালটন তাদের জায়গা এখন পর্যন্ত ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
বাংলা তে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করা একটি সাইট হলো BNLite নতুন জানা- অজানা বিভিন্ন তথ্য পেতে চাইলে ভিজটকরতে পারেন
ওয়ালটনের বর্তমান অবস্থা কেমন?
২০২০ সালে ওয়ালটন ৫০ কোটি টাকা ইনভেস্ট করে গাজীপুরের চন্দ্রায় বাংলাদেশে প্রথম লিফট ম্যানুফ্যাকচারিং করা হয়।একই বছর কোম্পানিটি তাদের তৈরি ওয়াশিং মেশিন ভারতে রপ্তানি করা শুরু করে।সেই বছর ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের লিস্টে থাকার মাধ্যমে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিয়াল লিমিটেডের স্টক মার্কেটে যাত্রা শুরু করে।২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিয়াল লিমিটেড মোট নেট আয়ের পরিমাণ ছিল ৪১১০ কোটি টাকা এবং টেক্সের পরের নেট প্রফিটের পরিমাণ ছিল ৭৩০ কোটি টাকা।২০১৯-২০২০ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি তাদের সাধারণ শেয়ার হোল্ডারদের জন্য ২০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ এবং স্পন্সর ও ডিরেক্টরদের জন্য ৭৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ বরাদ্দ করেছিল।২০২০-২০২১ অর্থবছরে কোম্পানিটির আয় পূর্বের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৭০ শতাংশ বেড়ে ৮,০০০ কোটি টাকায় পৌঁছায়।এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির টেক্সের পরের নেট প্রফিটের পরিমাণ পূর্বের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১২৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬৪২ কোটি টাকা।ফলে সাধারণ শেয়ার হোল্ডারদের জন্য ২৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ এবং স্পন্সর ও ডিরেক্টরদের জন্য ১৭০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।এই সময়েও নেট এসেট মূল্য ছিল ১২,১৩১ কোটি টাকা।এই অর্থবছরে এই কোম্পানিটির ইউ.পি.এস ১২৪ শতাংশ বেড়ে দাড়িয়েছে ৫৪.২১ টাকা।সারাদেশে ওয়ালটনের মার্কেটিং নেটওয়ার্কের পাশাপাশি ৪০০ টিরও বেশি নিজস্ব মালিকানাধীন শোরুম রয়েছে।এছাড়া দেশে ১৭ হাজারেরও বেশি বিক্রি হচ্ছে ওয়ালটনের পণ্য। কাস্টমারদের বিক্রয় সেবা দিতে দেশব্যাপী ৭৬ টিরও বেশি সার্ভিস পয়েন্ট রয়েছে কোম্পানিটির।
অনেক সুন্দর উপস্থাপনা
ধন্যবাদ ।আমাদের সাথেই থাকুন।